(সহজ উপায় ও নির্দেশিকা)
আগের অর্থ বছর অর্থাৎ
০১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত মোট ১২ মাসের আয়ের হিসাব করে বার্ষিক রিটার্ন
দিতে হয়। সাধারণত প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে যেকোনো করদাতা চাইলে
রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ণ দাখিলে ব্যর্থ হলে প্রযোজ্য
জরিমানা আরোপযোগ্য।
আজ জানাতে চাই, কিভাবে
খুব সহজে কোন বিষেশজ্ঞদের সাহায্য ছাড়াই নিজেরা আয়কর রিটার্ন পূরণ ও প্রদেয় কর পরিশোধ
করবো। বিগত ২০০৫ সাল থেকে নিজের টেক্স রিটার্ন নিজে পূরন করছি এবং ভাল লাগার জায়গা
থেকে বেশ কিছু শুভাকাঙ্খিদের শিখিয়েছি কিভাবে নিজের আয়কর রিটার্ন পূরণ, প্রদেয় কর নির্ণয়
এবং দলবেধে আয়কর মেলায় গিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। যদিও আমি ২০০০ সাল থেকে ঢাকা
টেক্স বার এর সদস্য তাই ভালবাসা এবং কর্তব্যবোধ থেকে নিঃস্বার্থভাবে পরিচিতিজনদের সাহায্য
করে আসছি।
লেখাটি পাঠকের সহজবোধ্য হওয়ার লক্ষ্যে শুধুমাত্র
মৌলিক বিষয়ের উপর দৃষ্টিপাত করা হলঃ
আয়ের উৎসের উপর ভিত্তি
করে বিভিন্ন শ্রেনির ব্যক্তি করদাতার মোট আয়ের পরিমান যদি কর অব্যাহতি প্রাপ্তির পর
করমুক্ত আয়সীমা ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা অতিক্রম করে তবে করমু্ক্ত সীমার উর্ধ্বের
আয়ের জন্য এলাকাভেদে ন্যূনতম করের হার যথাক্রমে ৫ (পাঁচ) বা ৪ (চার) বা ৩ (তিন) হাজার।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায় কোন ব্যক্তি অন্যান্য ভাতাদি আমলে না এনে শুধুমাত্র মাসিক মূল
বেতন বাবদ ২১, ৫০০/- টাকা পায় এবং মাসিক মূল বেতনের সমপরিমাণ ২ (দুই) টি উৎসব বোনাস
পায়। এক্ষেত্রে তার ১২ (বার) মাসে মোট আয়ের পরিমানঃ ৩,০১,০০০/- {মূল বেতন (২১, ৫০০/-× ১২) + উৎসব বোনাস (২১, ৫০০/-×
২)}। এখানে করমুক্ত আয় সীমার (৩০০,০০/-) উর্ধ্বের আয়ের পরিমান ১,০০০/- (এক) টাকা যার
জন্য তাকে ন্যূনতম কর পরিশোধ করতে হবে ৫,০০০/- (পাঁচ) হাজার টাকা (ঢাকায় বসবাসের ক্ষেত্রে)।
বিদেশে চাকুরীরত কোন
ব্যক্তি অথবা মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের পরিবার যদি ঢাকাতে বসবাস করে এবং প্রতিমাসে যদি পরিবারকে
৫০,০০০/- টাকা হারে প্রেরণ করে সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির বাৎসরিক ফরেন রেমিটেন্স বাবদ
আয়ের পরিমানঃ (৫০,০০০/-× ১২)= ৬০০,০০০ (ছয় লক্ষ) টাকা, যা সম্পূর্ন আয়কর মু্ক্ত। উল্লেখ্য,
বিদেশ হতে প্রেরিত অর্থ হতে বাৎসরিক পারিবারিক খরচ যদি ৩৫০,০০০/- (তিন লক্ষ পঞ্চাশ
হাজার) টাকা হয় এবং অবশিষ্ট ২৫০,০০০/- (দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকার পোষ্টাল সঞ্চয়
অথবা সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ করে তবে তাকে আয়কর রির্টান দাখিল করতে হবে। বর্তমানে
সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন আবশ্যক। পোষ্টাল সঞ্চয় অথবা সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের মাধ্যমে উক্ত
বিনিয়োগ হতে প্রাপ্ত মুনাফা যেহেতু করমুক্ত সীমা অতিক্রম করবেনা তাই আইন অনুযায়ী তাকে
শুধুমাত্র রিটার্ন দাখিল করতে হবে কিন্তু কোনো কর দিতে হবে না। শুধু রিটার্ন ফরম পূরণ
করে নির্ধারিত ট্যাক্স সার্কেল-এ জমা দিলেই হবে।
এই ধরনের ব্যক্তিদের
কথা চিন্তা করে কর বর্ষ ২০২০-২১ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মাত্র এক পৃষ্ঠার একটি রিটার্ন
ফরম চালু করেছে। খুব সহজেই এই রিটার্ন ফরম পূরণ করে রিটার্ন দাখিল করা যায়। আর যদি
পোষ্টাল সঞ্চয় অথবা সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের বিনিয়োগ বেশি পরিমান হয় এবং বছর শেষে সঞ্চয়পত্রের
মুনাফা করমুক্ত আয়ের সীমা অর্থাৎ তিন লাখ টাকা অতিক্রম করে সেক্ষেত্রে কর প্রদান আবশ্যক।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমলে আনলে খুব সহজেই
নিজেদের রিটার্ন নির্ভুলভাবে পুরন ও দাখিল করতে পারি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
প্রতি বছর আয়কর নির্দেশিকা প্রকাশ করে। https://nbr.gov.bd/uploads/publications/Nirdeshika_2021-2022.pdf লিংক হতে আমরা সহজেই ডাউনলোড করতে পারি। আয়কর নির্দেশিকা
২০২১-২২ এ অনেক উদাহরণ দেওয়া আছে। আমরা যে যেই পেশায় আছি সে মোতাবেক উদাহরণটি ঠিক মত
অনুসরন করে পাটিগণিতের অংকের মত করে সহজেই কারোও কোন সাহায্য ছাড়াই রিটার্ন ফরম পূরণ
করতে পারি।
আরেকটি বিষয় লক্ষনীয়
আমরা ১২ ডিজিটের টিআইএন সংগ্রহপূর্বক সার্বজনীন স্বনির্ধারনী পদ্ধতিতে নিজের আয়কর রিটার্ন
পুরন করবো এবং মেলায় দাখিল করবো। যা সত্যিই আনন্দদায়ক। সার্বজনীন স্বনির্ধারনী পদ্ধতি
ব্যক্তি শ্রেনির করদাতা তার নিজের আয় নিজে নিরূপণ করে প্রযোজ্য আয়কর পরিশোধ করে। সাধারনত
এই পদ্ধতিতে ৩০ শে নভেম্বরের মধ্যে বা উপ কর কমিশনারের কর্তৃক অনুমোদিত বর্ধিত সময়ের
মধ্যে দাখিল করতে হবে। সার্বজনীন স্বনির্ধারনী পদ্ধতির রির্টান ফরম IT-11GA যা https://nbr.gov.bd/uploads/form/74.pdf লিংক হতে সংগ্রহ করতে পারি।
এছাড়াও আয়কর সংক্রান্ত
বিভিন্ন question & Answer সংক্রান্ত
বিষয় জানতে চইলে এই লিংকে (https://nbr.gov.bd/faq/income-tax-faq/eng) ক্লিক করে জানতে পারবো
স্বল্প পরিসরে চেষ্টা
করেছি যথাসম্ভব বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করতে কিন্তু সল্প পরিসরে বর্ননা করতে গিয়ে কোন
কিছু ভুল উপস্থাপিত হলে অনুগ্রহপূর্বক কমেন্টেস এ সংশোধনী জানাবেন। যেহেতু ভালবাসার
জায়গা থেকে বিষয়টি লেখা, তাই একজনও যদি এই লেখাটি পড়ে এবং নিজের আয়কর রিটার্ন পূরন
এবং দাখিল করেন সেইটায় সার্থকতা।